জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার নতুন দ্বার
সম্প্রতি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এবার তিনি জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন, যা দেশের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
NATIONAL NEWSINTERNATIONAL NEWS
9/23/20241 min read


ঢাকা, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ (দৈনিক একুশের বাণী): সম্প্রতি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এবার তিনি জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন, যা দেশের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল ২৭ সেপ্টেম্বর অধিবেশনে অংশ নেবে। এই সম্মেলনটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে, কারণ এটি দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে আগের সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল, তা মেরামত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের সুযোগ
জাতিসংঘে বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এবারের অধিবেশনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি ‘বিশাল সুযোগ’, যা বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনে সহায়ক হবে। জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ২৪ সেপ্টেম্বর একটি উচ্চ পর্যায়ের রিসেপশনের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. হুমায়ূন কবিরের মতে, ড. ইউনূসের মতো একজন ব্যক্তিত্বের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার ফলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচিত হতে পারে। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, সংস্কারমূলক পদক্ষেপ, এবং মানবাধিকার ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সহায়তা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও উন্নয়নে বিদেশি বিনিয়োগ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বৈদেশিক সহায়তা এবং বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে এই সম্মেলন কার্যকর হতে পারে। সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহমুদ হাসান মনে করেন, দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, "আমাদের এখন প্রয়োজন অর্থনৈতিক সহায়তা, যা এই অধিবেশন থেকে পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।"
মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার
মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এবার একটি নতুন চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও জনগণের কল্যাণে নেওয়া পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরতে সচেষ্ট হবে।
ভারতের সাথে সম্পর্ক পুনর্গঠন
এবারের সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠকের কথা রয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং দ্বিপাক্ষিক স্বার্থের বিষয়গুলো আলোচনায় আসবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন মনে করেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত রাখতে উভয় পক্ষেরই আন্তরিক আলোচনা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক খ্যাতি এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে তার বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে শোনা হবে। জাতিসংঘের এই অধিবেশনে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক সংকট, প্রযুক্তি হস্তান্তর, নিরাপদ অভিবাসন, রোহিঙ্গা সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে পারে।
এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার এবং ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বৈশ্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।