“চেয়েছিলাম কোটা সংস্কার, হয়ে গেলো দেশ পরিস্কার”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ ছাড়ার তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় একজন সক্রিয় আন্দোলনকারী এই বলে মন্তব্য করেন - “চেয়েছিলাম কোটা সংস্কার, হয়ে গেলো দেশ পরিস্কার”, পরবর্তীতে পরিবারতন্ত্রের কেউ এলে এটা তাদেরও যেনো মনে থাকে এবং এই দেশের প্রতিটা বিবেকবান সচেতন নাগরিক আমাদের এই বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
NATIONAL NEWS
8/6/20241 min read
বিশেষ প্রতিনিধি (একুশের বাণী), ৬ জুলাই ২০২৪: চলতি বছরের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়, যা প্রথমে শান্তিপূর্ণ থাকলেও মধ্য জুলাইয়ে সহিংসতায় রূপ নেয়। শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী নামানো হয় এবং এতে চারশ’র বেশি মানুষ নিহত হয়। ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিদের কোটা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার করে।
এই ক্ষোভের প্রকাশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দেয়। মধ্যরাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয় তারা। মিছিলে ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, "লাখো শহীদের রক্তে কেনা,দেশটা কারো বাপের না", "তুমি কে, আমি কে? বাংলাদেশ, বাংলাদেশ" সহ বিভিন্ন স্লোগান শোনা যায়। পরদিন ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঔদ্ধত্যের জবাব দেবে ছাত্রলীগ’। এর ফলে ১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়।
এরপর ১৭ জুলাই শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান। ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীরা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ডাক দেয়। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী নিহত হয়। সরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা ১৫০ জন হলেও বেসরকারি মতে তা ৩০০-র কাছাকাছি।
পরবর্তীতে ছাত্রদের এ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনী ও ছাত্রলীগের আক্রমণের প্রেক্ষিতে ছাত্ররা এক দফা দাবি "স্বীরাচারী সরকারের পতন চাই" আদায়ে সোচ্চার হয়ে ওঠে। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে সরকার পতনের দাবি ওঠে। শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম সরকার পদত্যাগের দাবি জানান। রোববার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ নিহত হয়।
‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি একদিন এগিয়ে ৫ আগস্ট পালনের ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীরা। রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কারফিউ জারি হলেও শিক্ষার্থীরা তা মানেনি। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়ে হাজারো ছাত্রজনতা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ ছাড়ার তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় একজন সক্রিয় আন্দোলনকারী এই বলে মন্তব্য করেন - “চেয়েছিলাম কোটা সংস্কার, হয়ে গেলো দেশ পরিস্কার”, পরবর্তীতে পরিবারতন্ত্রের কেউ এলে এটা তাদেরও যেনো মনে থাকে এবং এই দেশের প্রতিটা বিবেকবান সচেতন নাগরিক আমাদের এই বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন- “আমরা যেনো ভুলে না যাই যেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ ছিলো তা যেনো প্রতিহিংসায় রূপ না নেয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের সবাইকে নিজের বিবেককে জাগ্রত করে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। কোনো ধরনের নৈরাজ্য বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ছাত্রদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কে সহিংস আন্দোলনে আখ্যায়িত করার সুযোগ যেনো কেউ না পায় সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।"
১৯৭১ সালে যেমন বিজয়ের পর লুটপাট, হামলা, ভাংচুর হয়েছিলো; ২০২৪-এ এসেও একই অবস্থা। দায়িত্বশীলতা দেখানোর দায়িত্ব বিজয়ীদের। বিজয়টা ধরে রাখার দায়িত্বও বিজয়ীদের। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি যেন আর না হয়, সচেতন থাকা উচিৎ সকলেরই।