আগুন থেমেছে, কিন্তু জ্বলছে ক্ষতির হিসাব: শাহজালালের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ২০ ঘণ্টা পরও ধোঁয়া উড়ছে। আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে আমদানি কমপ্লেক্সের বেশ কয়েকটি গুদাম, ধ্বংস হয়েছে কোটি কোটি টাকার পণ্য, ভস্মীভূত হয়েছে বহু ব্যবসায়ীর স্বপ্ন।
NATIONAL NEWS
10/19/20251 min read


ঢাকা, ১৯ অক্টোবর ২০২৫: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ২০ ঘণ্টা পরও ধোঁয়া উড়ছে। আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে আমদানি কমপ্লেক্সের বেশ কয়েকটি গুদাম, ধ্বংস হয়েছে কোটি কোটি টাকার পণ্য, ভস্মীভূত হয়েছে বহু ব্যবসায়ীর স্বপ্ন।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ২টার দিকে কার্গো ভিলেজের আমদানি কমপ্লেক্সের কুরিয়ার গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের গুদামগুলোতেও। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিস, বিমানবাহিনীর নিরাপত্তা ইউনিট, আনসার, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে যৌথভাবে কাজ শুরু করেন।
প্রায় ৩৭টি ইউনিটের সাত ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও কার্গো এলাকার ভেতরে এখনো ধোঁয়া উঠছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
“খোপ খোপ কনক্রিট, ভেতরে পৌঁছাতে সময় লেগেছে”
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “কার্গো কমপ্লেক্সটি খোপ খোপ ও কনক্রিটের দেয়ালে বিভক্ত হওয়ায় প্রতিটি অংশে আলাদা করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে। বাতাসের কারণে খোলা জায়গার পণ্যগুলো দ্রুত জ্বলে গেছে।”
তিনি আরও জানান, আগুন সম্পূর্ণ নেভাতে দীর্ঘ সময় লেগেছে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কার্গো ভিলেজে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।
ফ্লাইট চলাচল বন্ধ, প্রবাসীদের দুর্ভোগ
অগ্নিকাণ্ডের কারণে বিমানবন্দরের কার্যক্রম সাত ঘণ্টার জন্য স্থবির হয়ে পড়ে। এতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় ফ্লাইটে বিলম্ব ঘটে। রাত থেকে ধীরে ধীরে ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক হলেও যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
প্রবাসে গমনরত হাজারো যাত্রীকে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে বিমানবন্দরের ভেতরে ও বাইরে।
তদন্ত কমিটি ও সরকারি আশ্বাস
অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, “এটি একটি বড় ধরনের ক্ষতি। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে। দেশবাসীর প্রার্থনা ও সহযোগিতাই এখন সবচেয়ে প্রয়োজন।”
সরকারের কঠোর অবস্থান
প্রধান উপদেষ্টা দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যদি অগ্নিসংযোগ বা নাশকতার কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়, সরকার তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। তারা আরও জানিয়েছে, “জনজীবন বা রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে কেউ বিঘ্নিত করতে পারবে না—এই বিষয়ে সরকার সর্বোচ্চ সতর্ক।”
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কান্না
কার্গো ভিলেজের সামনে দাঁড়িয়ে এক ব্যবসায়ী বলেন, “দুই বছরের আমদানি করা পণ্য এক রাতেই ছাই হয়ে গেল। আমি এখন একেবারে পথে বসে গেলাম।”
আরেকজন বলেন, “এখনো গুদামের ভেতর থেকে ধোঁয়া উঠছে। কেউ জানে না, আমাদের বাকি পণ্যগুলোর কী অবস্থা।”
দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও প্রবাসী সংযোগের প্রধান এই বিমানবন্দরে এমন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পণ্য রপ্তানি ও আমদানি উভয় খাতেই বড় ধাক্কা লেগেছে। যদিও রাতের পর বিমানবন্দরের কার্যক্রম সচল হয়েছে, কিন্তু কার্গো ভিলেজের ধোঁয়ার সঙ্গে জড়িয়ে আছে শত শত ব্যবসায়ীর চোখের জলে লেখা ক্ষতির ইতিহাস।
