ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা, ২০ মে ২০২৫: বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশকে সহজতর ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে এবং শিল্পায়নের গতি বাড়াতে সরকার বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট ছয়টি সংস্থাকে একীভূত করার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ প্রেক্ষাপটে বিসিক শিল্পনগরী শিল্প মালিক সমিতি এই প্রস্তাবনাকে সময়োপযোগী, বাস্তবভিত্তিক এবং দুরদর্শী পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করে এতে আন্তরিক সমর্থন জানিয়েছে।
একীভূত হতে যাওয়া ছয়টি সংস্থা:
১. বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA)
২. বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (BEPZA)
৩. বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (BEZA)
৪. বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (BHTPA)
৫. পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষ (PPPA)
৬. বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (BSCIC)
শিল্পমালিকদের প্রতিক্রিয়া:
বিসিক শিল্পনগরী শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ মহিউদ্দিন শেখ এবং সেক্রেটারি জেনারেল ড. বেলাল উদ্দিন আহমেদ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন— “এই একীভূত কাঠামো বাস্তবায়িত হলে শিল্প উদ্যোক্তারা একই প্ল্যাটফর্ম থেকে সব ধরনের সরকারি সেবা, অনুমোদন, নীতিগত সহায়তা ও পরামর্শ সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে পাবেন। এতে শিল্প স্থাপন, সম্প্রসারণ ও পরিচালনায় সময় ও ব্যয় কমবে এবং সেবা প্রদানের গতিও বাড়বে।”
তাঁরা আরও বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আলাদা আলাদাভাবে ফাইল পাঠানো, অনুমোদন গ্রহণ, জমি বরাদ্দ, অবকাঠামো উন্নয়ন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাপোর্ট ইত্যাদি বিষয়ে উদ্যোক্তাদের নানা জটিলতার মুখে পড়তে হয়। একীভূত কাঠামো চালু হলে এসব সেবার মধ্যে সমন্বয় সাধন হবে, ফলে “ওয়ান-স্টপ সার্ভিস” বাস্তব রূপ পাবে।
উচ্চপর্যায়ের কমিটি ও তাঁদের ভূমিকা:
এই প্রস্তাবনার সফল বাস্তবায়নে গঠিত হয়েছে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি। এর সদস্যরা হলেন—
১। জনাব আদিলুর রহমান খান, মাননীয় উপদেষ্টা, শিল্প মন্ত্রণালয়
২। শেখ বশিরউদ্দীন, মাননীয় উপদেষ্টা, বাণিজ্য, বস্ত্র ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়
৩। জনাব লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত
৪। ড. আহসান এইচ মনসুর, গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
৫। জনাব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, মুখ্য সচিব, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
৬। ড. মোঃ মোখলেস উর রহমান, সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
৭। ড. মোঃ খায়েরুজ্জামান মজুমদার, সচিব, অর্থ বিভাগ
৮। চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, নির্বাহী চেয়ারম্যান, BIDA
বিসিক শিল্পনগরী শিল্প মালিক সমিতির মতে, এই কমিটির সদস্যরা তাঁদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বের মাধ্যমে পরিকল্পনাটিকে দ্রুত বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে নেবেন এবং উদ্যোক্তাদের মধ্যে যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ, জটিলতা ও দ্বিধা ছিল তা দূর হবে।
বিনিয়োগবান্ধব বাংলাদেশের দিকে অগ্রযাত্রা:
বিশ্ব বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে হলে প্রয়োজন গতিশীল, স্বচ্ছ এবং সেবা-কেন্দ্রিক একটি কাঠামো। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের প্রতি আরও আগ্রহী হবেন। পাশাপাশি ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ সব ধরনের উদ্যোক্তাই সমানভাবে উপকৃত হবেন
বিশেষ গুরুত্ব বিসিক শিল্পনগরীগুলোতে:
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত বিসিক শিল্পনগরীগুলোতে বর্তমানে শত শত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকারখানা পরিচালিত হচ্ছে। এসব কারখানার মালিকগণ সেবা পেতে নানা সময়ে ভোগান্তির শিকার হন। এই নতুন কাঠামো কার্যকর হলে, এই সেবাগুলো সমন্বিতভাবে মিলবে এবং উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বাস্তব সহায়ক পরিবেশ তৈরি হবে।
বিসিক শিল্প মালিক সমিতি আশাবাদ ব্যক্ত করেছে যে, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সুদূরপ্রসারী দিকনির্দেশনায় সরকার ঘোষিত এই ঐতিহাসিক উদ্যোগ বাস্তবে রূপ পাবে এবং বাংলাদেশ একটি উন্নত শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির দিকে দৃঢ়পদে এগিয়ে যাবে।
🗞️ সূত্র: বিসিক শিল্পনগরী শিল্প মালিক সমিতির বিবৃতি ও সরকারি সভার সিদ্ধান্ত