দৈনিক একুশের বাণী | THE DAILY EKUSHER BANI

দুই মাসে ঘর থেকে ব্যাংকে ফিরেছে ১৪ হাজার কোটি টাকা

ব্যাংকে জমাকৃত টাকা তুলে নিজের কাছে রাখার প্রবণতা হঠাৎ বাড়তে শুরু করে গত বছরের নভেম্বর থেকে। এ প্রবণতায় ব্যাংকগুলোর ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়। তবে দীর্ঘ ১০ মাস পর ঘরে রাখা টাকা ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে।

NATIONAL NEWS

11/13/20241 min read

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংকে জমাকৃত টাকা তুলে নিজের কাছে রাখার প্রবণতা হঠাৎ বাড়তে শুরু করে গত বছরের নভেম্বর থেকে। এ প্রবণতায় ব্যাংকগুলোর ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়। তবে দীর্ঘ ১০ মাস পর ঘরে রাখা টাকা ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে।

গত দুই মাসে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যাংকে ফিরেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, বেশ কিছু কারণে মানুষের হাতে গত ১০ মাস টাকা বেড়েছিল। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, নির্বাচনকেন্দ্রিক অনিশ্চয়তা, দুই ঈদের বাড়তি খরচ, ব্যাংক মার্জের খবর এবং জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের প্রভাবে অনেকে টাকা তুলে নিয়েছিল।

তাই ব্যাংকের বাইরে টাকা বেড়েছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের নানা উদ্যোগে স্থিতিশীলতা ফেরায় ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে। তাই ঘরে থাকা টাকা ব্যাংকে ফিরছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, মানুষের কাছে নগদ টাকা বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া বোঝা যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা সরবরাহের ওপর।

ছাপানো নগদ টাকার একটি অংশ কেন্দ্রীয় ও সোনালী ব্যাংকের চেস্ট শাখায় গচ্ছিত থাকে। দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে ব্যাংকগুলোর ভল্টেও কিছু টাকা থাকে। এ ছাড়া ছাপানো টাকার একটি অংশ থাকে মানুষের হাতে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অক্টোবর শেষে ছাপানো টাকার পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৫২ হাজার ৮৯৫ কোটি। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ও সোনালী ব্যাংকের চেস্ট শাখায় ছিল ৫১ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা।

বাকি অর্থের ২১ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা ব্যাংকগুলোর ভল্টে এবং দুই লাখ ৭৯ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা ছিল মানুষের হাতে। অক্টোবর শেষে প্রচলনে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল তিন লাখ এক হাজার ৮১ কোটি।

যদিও গত আগস্ট শেষে ছাপানো টাকার পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৫২ হাজার ৭২২ কোটি। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ও সোনালী ব্যাংকের চেস্ট শাখায় ছিল ৩৫ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। বাকি অর্থের ২৩ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা ব্যাংকগুলো ভল্টে এবং দুই লাখ ৯৩ হাজার ৬২২ কোটি টাকা মানুষের হাতে ছিল। তবে ১৫ আগস্ট তা ছিল তিন লাখ এক হাজার ৯৪৭ কোটি। আগস্ট শেষে প্রচলনে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল তিন লাখ ১৬ হাজার ৮০০ কোটি। অর্থাৎ দুই মাসে মানুষের হাতে থাকা ১৪ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা ব্যাংকে ফিরেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, সরকার পতনের পর পর ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকা বেড়ে গিয়েছিল। তা প্রায় তিন লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে ধীরে ধীরে তা কমে এখন দুই লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকায় নেমেছে। এতে বোঝা যায় মানুষ ব্যাংকে টাকা ফেরত দিচ্ছে।

বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেও ভালো ব্যাংকগুলোতে ডিপোজিট অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি দুর্বল ব্যাংকগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তারল্য সহায়তার কারণে গ্রাহকদের আস্থা কিছুটা ফিরেছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তোফা কে মুজেরী বলেন, মানুষের হাতের টাকা ব্যাংকে ফিরেছে এটা ভালো দিক। বোঝা যাচ্ছে, ব্যাংকের প্রতি মানুষের নতুন করে আস্থা তৈরি হয়েছে।