হামাসে ‘যুদ্ধের অবসান’ নিশ্চয়তা, ইসরায়েল অনুমোদন দিল যুদ্ধবিরতি
দীর্ঘ সময়ের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর অবশেষে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতির আলো দেখা দিয়েছে। এই সমঝোতা চুক্তির মধ্য দিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলা ভয়াবহ যুদ্ধের অবসানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা ইতিমধ্যেই লাখো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এবং গাজাকে পরিণত করেছে এক ধ্বংসস্তূপে।
INTERNATIONAL NEWS
10/10/20251 min read


দৈনিক একুশের বাণী ডেস্ক রিপোর্ট: দীর্ঘ সময়ের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর অবশেষে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতির আলো দেখা দিয়েছে। ইসরায়েল সরকার বৃহস্পতিবার রাতে জরুরি বৈঠকে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। অপরদিকে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ঘোষণা করেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর কাছ থেকে যুদ্ধ “স্থায়ীভাবে শেষ হওয়ার নিশ্চয়তা” পেয়েছে।
এই সমঝোতা চুক্তির মধ্য দিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলা ভয়াবহ যুদ্ধের অবসানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা ইতিমধ্যেই লাখো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এবং গাজাকে পরিণত করেছে এক ধ্বংসস্তূপে।
চুক্তির মূল ধারা
মধ্যস্থতাকারী মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হওয়া এই চুক্তিতে কয়েকটি ধাপ নির্ধারণ করা হয়েছে—
১। তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি: ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।
২। বন্দি বিনিময়: প্রথম ধাপে হামাস আটক ৫০ জন ইসরায়েলি নাগরিক ও সেনাকে মুক্তি দেবে, এর বিনিময়ে ইসরায়েলও শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে।
৩। সেনা প্রত্যাহার: ইসরায়েল ধাপে ধাপে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে।
৪। মানবিক সহায়তা: জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে।
হামাসের প্রতিক্রিয়া
হামাসের সিনিয়র নেতা খালিল আল-হাইয়া বলেছেন, “আমরা মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে লিখিত নিশ্চয়তা পেয়েছি—এই চুক্তি যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাবে এবং গাজার পুনর্গঠন শুরু হবে।”
তিনি আরও জানান, “ফিলিস্তিনি জনগণের রক্ত বৃথা যাবে না। এই যুদ্ধবিরতি কেবল অস্ত্রবিরতি নয়, এটি আমাদের আত্মমর্যাদার বিজয়।”
ইসরায়েলের অবস্থান
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, “ক্যাবিনেট জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সীমিত পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি অনুমোদন করেছে, যাতে বন্দিদের নিরাপদে ফেরানো যায়।”
তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা “সতর্ক অবস্থানে” থাকবে এবং যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ হলে পুনরায় অভিযান চালাতে প্রস্তুত
গাজার ভয়াবহ বাস্তবতা
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার বেশিরভাগই নারী ও শিশু। হাজার হাজার মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে, আর গাজার অধিকাংশ হাসপাতাল কার্যত অচল।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ৮০ শতাংশ মানুষ এখন মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
বিশ্লেষণ: স্থায়ী শান্তির পথে?
বিশ্লেষকদের মতে, এই যুদ্ধবিরতি টেকসই শান্তির সূচনা কিনা তা নির্ভর করবে উভয় পক্ষের প্রতিশ্রুতির ওপর। ইসরায়েল যদি সত্যিই সেনা প্রত্যাহার করে এবং হামাস যদি রাজনৈতিক সমাধানের পথে এগোয়, তবে এটি মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় হতে পারে।
তবে অনেকেই সতর্ক করেছেন যে, গাজার পুনর্গঠন ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি এখনো জটিল। যুদ্ধবিরতি দীর্ঘমেয়াদে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করলেও, অবিশ্বাসের দেয়াল এখনো অটুট।
গাজার আকাশে প্রথমবারের মতো নীরবতা নেমে আসছে।
বোমার বিকট শব্দের বদলে মানুষ আবার আজানের ধ্বনি শুনতে চায়, শিশুদের হাসি শুনতে চায়।
বিশ্ব আশা করছে—এই যুদ্ধবিরতি যেন সত্যিই যুদ্ধের অবসান ঘটায়, না যে নতুন কোনো সংঘাতের সূচনা।
সূত্র: রয়টার্স, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (AP), দ্য গার্ডিয়ান, আল-জাজিরা, বিবিসি