সমুদ্রের বুকে মানবতার কণ্ঠরোধ : গাজামুখী ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি হামলার অভিযোগ
অন্ধকার সমুদ্রপথে এগিয়ে চলছিল ৪৪ দেশের মানুষে ভরা এক বহর। উদ্দেশ্য একটাই—গাজায় অবরুদ্ধ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া মানবিক সহায়তা ও সহমর্মিতার বার্তা। কিন্তু সেই মানবতার যাত্রাপথেই আবারও বাধা হয়ে দাঁড়াল ইসরায়েলি নৌবাহিনী।
INTERNATIONAL NEWS
10/2/20251 min read


আন্তর্জাতিক ডেস্ক (২ অক্টোবর ২০২৫): অন্ধকার সমুদ্রপথে এগিয়ে চলছিল ৪৪ দেশের মানুষে ভরা এক বহর। উদ্দেশ্য একটাই—গাজায় অবরুদ্ধ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া মানবিক সহায়তা ও সহমর্মিতার বার্তা। কিন্তু সেই মানবতার যাত্রাপথেই আবারও বাধা হয়ে দাঁড়াল ইসরায়েলি নৌবাহিনী। বুধবার (১ অক্টোবর) সকালে আন্তর্জাতিক ফ্লোটিলা ‘গ্লোবাল সুমুদ’-এর বেশ কয়েকটি জাহাজকে ঘিরে ফেলে তারা। বহরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়, কারণ ‘আলমা’ নামের একটি জাহাজে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশের কণ্ঠ: শহিদুল আলমের চোখে দেখা বাস্তবতা
এই বহরে আছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম। তিনি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি যুদ্ধজাহাজের আগ্রাসী ঘেরাওয়ের পর হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় সব নেভিগেশন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। থেমে যায় সরাসরি সম্প্রচার। যেন সমুদ্রপথের মাঝখানে পুরো পৃথিবীর সঙ্গে তাদের যোগসূত্র কেটে দেওয়া হলো ইচ্ছাকৃতভাবে।
ভয়, আতঙ্ক, কিন্তু হাল না ছাড়া
ব্রাজিলিয়ান কর্মী থিয়াগো আভিলা জানান, ইসরায়েলি যুদ্ধজাহাজ কয়েক মিনিট ধরে আলমাকে ঘিরে ধরে এমনভাবে তৎপরতা চালায় যে, পুরো জাহাজের যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ে। কিন্তু এই ভয়, এই আতঙ্ক—কাউকেই দমাতে পারেনি। ফ্লোটিলার কর্মীরা ঘোষণা দেন, যতো বাধাই আসুক, তারা আবারো গাজার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন।
মানবতার বহরে নানা মুখ
এই বহরে আছেন প্রায় ৫০০ মানুষ—যাদের কেউ রাজনীতিবিদ, কেউ শিক্ষাবিদ, কেউ সাংবাদিক, কেউ আবার পরিবেশ আন্দোলনকর্মী। সুইডিশ তরুণী গ্রেটা থানবার্গও আছেন তাদের মাঝে। সবার লক্ষ্য এক: ইসরায়েলের অবরোধ ভেঙে অন্তত কিছুটা আশার আলো পৌঁছে দেওয়া গাজার ক্লান্ত, ক্লিষ্ট মানুষের কাছে।
ইসরায়েলের অবস্থান: মানবিক সহায়তাও ‘উসকানি’?
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এই ফ্লোটিলা কোনও মানবিক উদ্যোগ নয়, বরং একটি ‘উসকানিমূলক কর্মসূচি’। তাই যেভাবেই হোক, তারা গন্তব্যে পৌঁছাতে দেবে না। আগেও জুন ও জুলাই মাসে ইসরায়েল দুইবার এমন বহরকে আটকে দিয়েছিল।
সমুদ্রের ঢেউ আর মানবতার ঢেউ
একদিকে ইসরায়েলি যুদ্ধজাহাজের গর্জন, অন্যদিকে ভেসে চলা সাধারণ নৌকায় মানবতার দৃঢ় সংকল্প। ৪৪ দেশের মানুষ যখন একই স্বরে বলেন “গাজা একা নয়”, তখন পৃথিবী যেন শুনে ফেলে এক অবদমিত জাতির দীর্ঘশ্বাস।
এই ঘটনা শুধু একটি ফ্লোটিলার অবরোধ নয়, এটি মানবতার কণ্ঠরোধের প্রতীক। সমুদ্রের বুকে যখন দমবন্ধ করা অন্ধকার, তখন শহিদুল আলমদের মতো মানুষের চোখেই জ্বলে ওঠে প্রতিরোধের আলো—যা বলে দেয়, আশা কখনো ডুবে যায় না।