রোটারি ও গেটস ফাউন্ডেশনের নবায়িত অঙ্গীকার: পোলিওমুক্ত পৃথিবীর পথে এক ঐতিহাসিক যাত্রা
সম্প্রতি রোটারি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশনে ঘোষণা করা হয়েছে, আগামী তিন বছরে পোলিও নির্মূল কার্যক্রমে দুই প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে সর্বোচ্চ ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করবে। এর মধ্যে রোটারি প্রতি বছর সংগ্রহ করবে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, আর প্রতিটি ডলারের বিপরীতে গেটস ফাউন্ডেশন প্রদান করবে অতিরিক্ত দুই ডলার।
INTERNATIONAL NEWSHEALTH
8/25/20251 min read


পোলিও—একটি মারাত্মক ও পঙ্গুত্ব সৃষ্টিকারী রোগ—মানবজাতির জন্য দীর্ঘদিন ধরে এক আতঙ্কের নাম। একসময় পৃথিবীর প্রতিটি কোণে শিশুদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলেছিল এই ভাইরাস। তবে মানবতার কল্যাণে এক অভূতপূর্ব ঐক্য, দূরদর্শী উদ্যোগ ও অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলেই আজ পৃথিবী পোলিওমুক্তির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। এই লড়াইয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল এবং এর দীর্ঘদিনের কৌশলগত অংশীদার বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।
সম্প্রতি রোটারি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশনে ঘোষণা করা হয়েছে, আগামী তিন বছরে পোলিও নির্মূল কার্যক্রমে দুই প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে সর্বোচ্চ ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করবে। এর মধ্যে রোটারি প্রতি বছর সংগ্রহ করবে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, আর প্রতিটি ডলারের বিপরীতে গেটস ফাউন্ডেশন প্রদান করবে অতিরিক্ত দুই ডলার। অর্থাৎ, রোটারির এক ডলার কার্যত রূপ নেবে তিন ডলারে—যা বিশ্বব্যাপী টিকাদান, নজরদারি, জরুরি সাড়া প্রদান এবং পোলিও নির্মূল কর্মসূচি পরিচালনায় ব্যয় হবে।
▪ পোলিও নির্মূলে ঐতিহাসিক অগ্রগতি
১৯৮৫ সালে রোটারির উদ্যোগে পোলিওপ্লাস কর্মসূচির সূচনা হয়। ১৯৮৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) একত্রে গঠন করে গ্লোবাল পোলিও ইরাডিকেশন ইনিশিয়েটিভ (GPEI)। পরবর্তীতে গেটস ফাউন্ডেশন ও গাভি (GAVI) এই অভিযাত্রায় যুক্ত হয়। সে সময় প্রতি বছর প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার শিশু পোলিও আক্রান্ত হতো। আজ সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৯.৯% হ্রাস পেয়ে একেবারে হাতেগোনা কয়েক ডজন ক্ষেত্রে।
বর্তমানে শুধু আফগানিস্তান ও পাকিস্তানেই পোলিও ভাইরাস বিদ্যমান। তবে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে যদি সামান্য অবহেলা ঘটে, তবে পোলিও আবার ফিরে আসতে পারে। সম্প্রতি গাজায় একটি শিশু পোলিও আক্রান্ত হওয়ার পর রোটারি জরুরি উদ্যোগে ৫ লাখ মার্কিন ডলার সহযোগিতা করেছে। এটি প্রমাণ করে—পোলিও নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই শেষ নয়।
▪ মানবতার পক্ষে এক দৃঢ় অঙ্গীকার
রোটারি ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট স্টেফানি উর্চিক বলেছেন—“গত ৪০ বছর ধরে রোটারি পোলিও নির্মূলে অঙ্গীকারবদ্ধ। গেটস ফাউন্ডেশনের নবায়িত অংশীদারিত্ব আমাদের এই সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করবে। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, একদিন পৃথিবী হবে পোলিওমুক্ত।”
অন্যদিকে বিল গেটস বলেছেন—“রোটারি সর্বপ্রথম পোলিওমুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছিল। আজ আমাদের হাতে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও উপায় রয়েছে। যদি আমরা সবাই অঙ্গীকারবদ্ধ থাকি, তবে একদিন কোনো পরিবারকেই আর কখনো এই ভয়াবহ রোগের আতঙ্কে বাঁচতে হবে না।”
▪ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের রোটারিয়ানদের অবদান
রোটারির এই লড়াই শুধু অর্থ দিয়ে সীমাবদ্ধ নয়। সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ রোটারিয়ান স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে মাঠে নেমে কাজ করছেন। বাংলাদেশেও রোটারিয়ানরা দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত থেকে শিশুদের পোলিও টিকা প্রদানে কাজ করে আসছেন।
এখন পর্যন্ত রোটারি বৈশ্বিকভাবে ২.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে, সাথে রয়েছে অসংখ্য মানবিক শ্রমঘণ্টা। কানাডাসহ অনেক দেশের সরকারও এই যুদ্ধে অগ্রণী ভুমিকা রাখছে। কানাডা একাই এ পর্যন্ত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে ১ বিলিয়নেরও বেশি কানাডিয়ান ডলার সহায়তায়।
উপসংহার
মানবতার ইতিহাসে গুটিবসন্ত নির্মূলের পর পোলিও হবে দ্বিতীয় রোগ যা পুরোপুরি পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে। আজ আমরা সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের খুব কাছাকাছি। তবে চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। রোটারি ও গেটস ফাউন্ডেশনের এই যৌথ অঙ্গীকার নিঃসন্দেহে এক আশার আলো, যা প্রমাণ করে—মানবতার কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা কখনো ব্যর্থ হয় না।
একটি শিশুরও যেন পোলিওতে আক্রান্ত না হতে হয়—এই অঙ্গীকার নিয়েই আমরা এগিয়ে চলেছি একটি পোলিওমুক্ত পৃথিবীর পথে।
-------
লেখকঃ
রোটাঃ পি.পি. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এম.পি.এইচ.এফ.
ডিস্ট্রিক্ট এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি (২০২০-২১),
রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮২
এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর,
রোটারি ক্লাব অব ব্রাইট ওয়ার্ল্ড
ডিরেক্টর,
জেনিথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃ