দৈনিক একুশের বাণী | THE DAILY EKUSHER BANI

ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি: অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তার ছায়া

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত উদযাপন করতে ‘মেক আমেরিকা ওয়েলদি অ্যাগেইন’ নামে এক আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আয়োজন করেছেন। তবে তাঁর এই নীতিকে ঘিরে অর্থনীতি ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

INTERNATIONAL NEWS

4/2/20251 min read

ঢাকা, ২ এপ্রিল ২০২৫, (দৈনিক একুশের বাণী): মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত উদযাপন করতে ‘মেক আমেরিকা ওয়েলদি অ্যাগেইন’ নামে এক আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আয়োজন করেছেন। তবে তাঁর এই নীতিকে ঘিরে অর্থনীতি ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

ট্রাম্পের দাবি, এই শুল্ক নীতি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ব্যবস্থাকে আরও ন্যায়সঙ্গত করবে, দেশকে আমদানিনির্ভরতা থেকে মুক্ত করবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। কিন্তু অনেক অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই পদক্ষেপ স্বল্পমেয়াদে অর্থনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে এবং মুদ্রাস্ফীতি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

  • নতুন শুল্ক ও রাজনৈতিক উদ্বেগ
    বিশ্লেষকদের মতে, নতুন শুল্ক নীতি মধ্যবিত্ত ও সাধারণ ভোক্তাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। মার্কিন সিনেটর জন হোভেন বলেছেন, "ট্রাম্পের এই কৌশলের মূল উদ্দেশ্য বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করা, তবে স্বল্পমেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।"

    হোয়াইট হাউসের নীতিনির্ধারকদের মধ্যেও এই নীতি বাস্তবায়ন নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক প্রেসিডেন্টকে পুরো অর্থনৈতিক চিত্র সঠিকভাবে উপস্থাপন করেননি, যা ভবিষ্যতে গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

  • অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বাজারের প্রতিক্রিয়া
    গোল্ডম্যান স্যাকস-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, আগামী ১২ মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা আসার সম্ভাবনা ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৫ শতাংশ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এই নতুন শুল্ক ব্যবস্থা অর্থনীতিকে স্থবির করে দিতে পারে এবং ‘স্ট্যাগফ্লেশন’ (অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও মুদ্রাস্ফীতির সমন্বিত পরিস্থিতি) সৃষ্টি করতে পারে। ইতোমধ্যে মার্কিন শেয়ারবাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

    ইতোমধ্যে মার্কিন উৎপাদন খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ইনস্টিটিউট ফর সাপ্লাই ম্যানেজমেন্ট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যে প্রবৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল, তা আবার সংকুচিত হচ্ছে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে আলোচনার মূল বিষয় হয়ে উঠেছে কে এই নতুন শুল্কের বাড়তি ব্যয় বহন করবে।"

  • রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা
    ট্রাম্পের এই নীতির বিরুদ্ধে নিজ দলের মধ্যেই বিভাজন তৈরি হয়েছে। কিছু রিপাবলিকান নেতা এটিকে মার্কিন শিল্পকে রক্ষা করার কৌশল হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ এটিকে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করছেন। সেনেটর জন কেনেডি বলেন, "দীর্ঘমেয়াদে এটি কাজ করতে পারে, কিন্তু স্বল্পমেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব মারাত্মক হতে পারে।"


ডেমোক্র্যাটরা ইতোমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সিনেটর টিম কেইন ও অ্যামি ক্লোবুচার বলছেন, অনেক রিপাবলিকান নেতা গোপনে তাঁদের সমর্থন দিচ্ছেন, কিন্তু প্রকাশ্যে কথা বলছেন না।

আন্তর্জাতিক পরিসরে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এই শুল্ক নীতির কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এক ইউরোপীয় কূটনীতিক জানিয়েছেন, "আমরা প্রস্তুত এবং উপযুক্ত জবাব দিতে তৈরি।"

ট্রাম্প তাঁর শুল্ক নীতিকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি ‘মহান বিজয়’ হিসেবে প্রচার করছেন, কিন্তু অর্থনীতিবিদদের মতে, এই নীতি যদি প্রত্যাশিত সুফল না দেয়, তবে তা আগামী নির্বাচনে তাঁর জনপ্রিয়তায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।